ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনা। আমরা তার শিক্ষা নেইনা। সময় বদলেছে। বদলেছে মানুষের স্বভাব। স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য আপথ-কুপথে পা বাড়াতে কোনো দ্বিধা করিনা। জাল সার্টিফিকেট তৈরি করে বিভিন্ন সরকারি চাকুরীরতে আসীন হই। একটু বাহ্বা,একটু প্রমোশন ও সুযোগ-সুবিধার জন্য পার্শ্ব শক্তি নিয়ে নিজের চেয়ারকে প্রশ্নবিদ্ধ করি । তাই একটু দয়া, একটু করুণা পেতে সমকালীন কোনো এক শক্তিতে তেল ঢালি। কারন আমাকে ভাবতে হয় যে, টিকতে হলে তেল ও ফুয়েল দেয়া জরুরী। আমি আগেই বলেছি সময় বদলেছে, স্বভাবও বদলেছে। মন্দ স্বভাব থেকে ভালো স্বভাবে পরিণত হবার জন্য বদলেনি। বদলে গেছে কারো কারো নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য। হয়তো আমি আমার কোনো দায়িত্বে থেকে অসৎ উপায় অবলম্বন করেছি, চুরি করা সহ সুদ-ঘুষ- আমানত তথা নানা কর্মের বেলায় ঘাপলা তৈরি করেছি। এসব অন্যায় সমূহকে ধামাচাপা দিতে কোনো শক্তিকে কাজে লাগিয়েছি। তাদের অনুকম্পা নিয়েছি। এখন সময়ের আবর্তনে চলছে -২০২৪ সাল। পরিবর্তন হয়েছে রাষ্ট্র ব্যবস্থা তথা সরকার ও সরকারে থাকা পদ-পদবি। কেহ কেহ কিছু পদেও বহাল রয়েছে। সেটা হতে পারে সামরিক-আধাসামরিক,সররকারি-আধাসরকারি স্কুল-কলেজ, সেবা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বরত, কিংবা ব্যক্তি হিসেবে নানা অফিস-আদালত ও সরকারি আমলাদের কৃপাভাজন। । তাদের অতীত অসমর্থিত ক্রিয়া-কর্মে টিকে থাকতে তেল মর্দনসহ যাবতীয় চেষ্টা সবাই সচক্ষে দেখেছে। তাই সবাই তা মনেও রেখেছে। সময় যখন পরিবর্তন হয়েছে, সুবিধাভোগীদের উপরের ছাতাগুলো সরে গেছে। ফলে তারা বিপাকে পড়ে গেছে। লেখার শুরুতে বলছি ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনা। আজ দেখছি কাউকে পদচ্যুত করতে নির্মম দৃশ্যের অবতাড়না হচ্ছে। শিক্ষককে সরাতে ব্যবহার করা হচ্ছে কোমলমতি ছাত্রদেরকে। অতীত সুবিধাভোগীদের কার্যকলাপ যারা মনে রেখেছে তাদের মধ্যেও ভালো-মন্দের লোকও রয়েছে। কেহ কোনো ঘটনার ঝাল মেটাতে, কেহ প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে কিংবা কেহবা যৌক্তিক কারণেই তাদের পদ থেকে সরানো হচ্ছে বা সারানোর কাজ চলছে। আমাদের অন্তরে তাদের জন্য দয়া-মায়াও তৈরি হচ্ছে। কিন্তু তাদের প্রতি আমাদের অনুকম্পার সুযোগ কোথায়? তাদের অতীত কার্যকলাপ তো আমাদেরকে তাদের প্রতি অনুকম্পা দেখানোর সুযোগ দেয়নি। হয়তো তাদের অপসারণে কিছু অসৎ ব্যক্তি তাদের সুযোগ নিচ্ছে। এ সুযোগ তো নিবেই। এটা রোধ করার ক্ষমতা এখন কারো নেই। অতীতকালে ভদ্রতা,আচরণ,শ্রদ্ধা ও স্নেহ,দয়া-পরবশ ছিলো বাস্তব কারণে। কারণ যে যেসব পদে বসতেন তারা তাদের সততা ও যোগ্যতার বলে সুমহান ছিলেন। এখন পদধারীরা কোনো চেয়ারে বসলে তাতে সন্দেহ থাকে। সন্দেহ থাকে ওই পদধারীর বৈধতা !! তাদের কিছু আচরণ সবাইকে হত-বিহ্বল করে। ফলে সবাই তা মনে রাখে ও পরবর্তীতে তার প্রতিশোধ নেয়। কাজেই বর্তমানে চেয়ারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কে অযৌক্তিকভাবে বা কে যৌক্তিকভাবে সরানোর পদক্ষেপ নিয়েছে তা দেখার সুযোগ নেই। কেহবা রাজনৈতিক কারণেও অপসারণ হতে পারে।
” কারণ স্কুল-কলেজ বা অন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠান বলি সবগুলো প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে থাকা অবস্থায় সেসব পদগুলো রাজনীতি নিরপেক্ষ রাখা উচিত ছিলো। ”
এখনও রাজনীতি নিরপেক্ষ রাখা উচিত।
তা নাহলে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এটা যদি অতীত থেকে প্রশ্নবিদ্ধ হবার কারণ থাকে তাহলে তো বর্তমানের সুযোগে তাকে নাজেহাল হতেই হবে। এসব পদধারীরা আগে হয়তো ভাবছিলো তাদের পদ চিরস্থায়ী। তাই তেল ও ফুয়েল দিয়ে চলতো তাদের পদ-পদবি। এ জন্য তো তার নিজের অসতর্কতা ও অসাধুতাই দায়ি। নিজেই নিজের চেয়ারকে আস্থার জায়গায় সংরক্ষণ করে তা নিরপেক্ষ করে রাখতে পারেনি। আমরা এখন কী করে তাদের পাশে দাঁড়াবো? দয়া দেখিয়ে পদধারী যদি কোনো দুষ্কর্মের ভাগীদার হয় তবে আমরাও কী তার অংশীদার হতে পারি? আদৌওনা। তবে আমরা এতটুকু বলতে পারি যে, যেহেতু সময় বদলে গেছে, “সেহেতু সবাই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত।”
আর বলতে পারি
“কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে কোনো শিক্ষককে স্কুল থেকে বের করার জন্য বেয়াদবিসুলভ আচরণ করা ঠিক নয়।”
এটা তাদের অভিভাবক,শিক্ষা অফিসারগণ ভেবে দেখতে পারেন। বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মীরা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসে যাচ্ছে কোনো প্রকার বৈষম্য আছে কী না দেখার জন্য। একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার আছে। এ মূহুর্তে যদি ওই আন্দোলনের ছেলেমেয়েরা সব তদারকি করতে থাকে তাহলে সরকারের ভেতর আরেকটি সরকার আছে বলে প্রতীয়মান হবে। তবে অতীতের সকল সরকারের কার্যকলাপ দেখে ও বর্তমানেও কিছু মানুষ তাদের দূর্ভোগের শিকার হয়ে যে কোনো সরকারকে আস্থাশীল ভাবতে পারছেনা এদেশের জনগণ। তবে ছাত্রদের আন্দেলনকে কেহ কেহ কর্যকরি মনে করছে। তাদের তদারকিকেই ইতিবাচক দেখছে জনগন। ফলে ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠী ভীড় জমাচ্ছে ছাত্রদের দিকে। যে যেভাবে পারে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রী ভাই-বোনদেরকে কাজে লাগাচ্ছে। এতে ইতিবাচক ফলও হয়েছে। নেতিবাচক খবরও কিছুটা আছে। ছাত্ররা বর্তমানে বন্যার উত্তরণেও কাজ করছে। বন্যার জন্য জমানো অর্থের টাকার অধিকার নিয়ে মারামারিও হয়েছে। পরে সেনাবাহিনী এসে তাদের শান্ত করেছে। আসলে আমরা অতীত ইতিহাস ভুলে যাই। একটি সরকার পরিবর্তন হলে রাষ্ট্রের সব জায়গায় পরিবর্তনের হাওয়া লাগে। ফলে বাঁধে সমস্যা। নিম্ন পর্যায়ে — যেখানে পাবলিকের ক্ষমতা রয়েছে সেখানে পরিবর্তন করতে গিয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। ন্যায়-অন্যায় পরের কথা। পক্ষে-বিপক্ষে চলে নানান মতামত। উভয় পক্ষে জোরালো অবস্থান হলে সেখানে বাঁধে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত। তাই নিম্ন পর্যায়ে সব জায়গায় কোটা সংস্কার তথা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্ররা তার সমাধান করতে পারবে বলে হয়না। যদিও এখন আস্থার জায়গা হলো আন্দোলনে সফল হওয়া ছাত্র সমাজ। বিদ্যুৎ গ্রাহকরা যখন অতিরিক্ত বিলের প্রতিকার চায়, ফোনের গ্রাহকরা যখন প্রতিটি এমবির মেয়াদের সময় ছাড়া তার ব্যবহার চায়, ভূমি অফিস-রেজিষ্ট্রি অফিস, কোর্ট-কাচারি, পাসপোর্ট অফিস, সমাজসেবা অফিস, ডিসি ও এসপি অফিস, তথ্য অফিসসহ যত ধরণের সরকারি- বেসরকারি-আধাসরকারি অফিস আছে সেখানে কোনো নাগরিকের অধিকার তথা সুবিধা পেতে বিড়ম্বনার শিকার হয় তখন এসব দূর্ভোগ পোহানো লোকজন ছুটে আসছেন বিগত সফল আন্দোলনকারী ছাত্রদের কাছে। এ অবস্থা সারা বাংলাদেশেই বিদ্যমান। কিছু ইতিবাচক ফলাফলে ছাত্রসমাজ প্রশংসাও কুঁড়িয়েছে। কিন্তু বাস্তবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে “সরকারের ভেতর আরেকটি সরকার” রয়েছে বলে। ছাত্রসমাজকে কেউ উপেক্ষাও করতে পারছেনা আবার শতভাগ দায়িত্বশীল হিসেবে ব্যবহারও করতে পারছেনা। এ যেন একটি জটিল অবস্থা !
যাক এখন সময় বদলেছে। অতীতে আঁড়িপাতাদের নজরদারিও বেড়েছে। এখন ইতিহাস হবে নতুনদের। কিন্তু তার ভবিষ্যত নির্ধারণ করা খুবই কঠিন। তবে অতীত থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত। এখনও যদি কেউ বিভ্রান্ত হয়ে কেউ নিজ ভোগ-বিলাসের রাজত্ব কায়েম করে, কোথায়ও অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে, তবে আরেকবার রাষ্ট্র পরিবর্তনের সময় একই অমানবিক আরণের শিকার হতে হবে। কারণ বর্তমান কার্যকলাপেও আঁড়িপাতা আছে অনেকেই। তখন বৈষম্য আচরণের জন্য বর্তমানরাই দায়ী থাকবে। সে বেলায় কারো দয়া ও অনুকম্পা কোনো কাজে লাগবেনা। ইতিহাস আমাদেরকে এটাই শিক্ষা দেয়।
Leave a Reply